ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব, ও ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা

বর্তমানে ডিজিটাল দুনিয়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং মার্কেটারদের কাছেও ডিজিটাল মার্কেটিং শব্দটি অতি পরিচিত। ছোট-বড় বিখ্যাত কোম্পানি থেকে শুরু করে হোল সেলার, ক্ষুদ্র কুঠির শিল্প, প্রত্যেকেই ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপরে নির্ভর করেই নিজেদের ব্যবসাটিকে আরও উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। যারা অন্যের অধীনে চাকুরী না করে স্বাধীনভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মার্কেটিং।

নিজেদের পন্য গুলিকে উপযুক্ত কাস্টমারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া অর্থাৎ দৃষ্টি আকর্ষণ করানো, তাদের কনভেন্স করানো আপনার প্রোডাক্টই বেস্ট, এই প্রক্রিয়াটিকে যাকে পাতি ভাষায় বলা হয় বিজ্ঞাপন দেওয়া যেটি আগে অফলাইনে পোস্টার, হোডিং, দূরদর্শনে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার করা হত। কিন্তু বর্তমানে মানুষের ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তিকে মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরা ডিজিটাল মাধ্যমকে হাতিয়ার বানিয়ে নিজেদের ব্র্যান্ড প্রমো শন, প্রোডাক্টের মার্কেটিং, স্বাধীন ক্রিয়েটিভিটির প্রচার করে থাকেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং প্রক্রিয়াটি সাধারনত বিভিন্ন ভাবে করা হয় যেমন- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইমেল মার্কেটিং,সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশান, ই-কমার্স ওয়েবসাইট, কন্টেন্ট মার্কেটিং এবং সিপিএ মার্কেটিং এর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপরে অতি নির্ভরতার কারন হিসাবে দেখা যায়, সারা বিশ্ব জুড়ে প্রায় ৫.১১ বিলিয়ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন এবং তার মধ্যে প্রায় ২ বিলিয়নের বেশি মানুষ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকেন। এত বিপুল পরিমাণ মানুষ অনলাইনে নিজেদের সারাদিনের অর্ধেক সময় কাটান বলেই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অতি সহজে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে বৃহত্তর পর্যায়ে নিজের সন্তান-সম স্টার্ট আপ বা ক্ষুদ্র ব্যবসাটিকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্বঃ

বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো, বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, বিশ্বের বড় বড় মার্কেট প্লেসের উন্নতি টিকে থাকা এবং উন্নতির এক অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে ডিজিটাল মার্কেটিংকে দেখা যায়। ইন্টারনেটের সৌজন্যে অনলাইনে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল অথবা গুগল নামক সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে সাধারন মানুষের অন্দরমহলে প্রবেশ করা অতি সহজ হয়ে গেছে। আপনি যদি সফলতম ব্যবসায়ী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়টিকে দক্ষতার সাথে শিখে নিতে হবে কারন ভবিষ্যতেও ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।

এবারে আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব গুলি ক্রমানুসারে আলোচনা করব।

১। সহজেই জনপ্রিয়তা অর্জন

ডিজিটাল মার্কেটিং এ অর্থাৎ অনলাইন ওয়েবসাইট বা জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলের মাধ্যমে যখন কোন ছোট ব্যবসায়ি অথবা স্টার্টআপ নিজেদের পণ্য গুলির প্রচার করবেন, সেটি সহজেই বিপুল সংখ্যক জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আপনি নিজের প্রোডাক্ট সম্পর্কে কন্টেন্ট ক্রিয়েটের দ্বারা ও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। বিভিন্ন এডিটিং অ্যাপ, ইনফরমেটিভ ভিডিও আপলোড করে মানুষের মনে নিজের ব্র্যান্ডের জায়গা করে নিতে পারেন। বর্তমানে মানুষ যে কোন পন্যদ্রব্য কেনার আগে ইন্টারনেটে সার্চ করে ভালো রিভিউ পেলে তবেই সেটা কিনতে আগ্রহী হয়।

তাহলে বুঝতেই পারছেন আমাদের গোটা মার্কেট অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়েছে। আপনি নিজের ব্র্যান্ডের পেজ বা ওয়েবসাইট বানিয়ে সঠিক ভাবে মার্কেটিং পরিকল্পনা বানিয়ে খুব অল্প সময়ে নিজের স্টার্টআপ অথবা ব্যবসার উন্নতি করতে পারেন। ইংরাজিতে দক্ষতা থাকলে বৃহত্তর মার্কেট প্লেসে ব্যবসাটিকে পরিচালনা করতে পারেন। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যবসায়ীরা খুব জনপ্রিয়তা লাভ করছে, নিজের ব্যবসাটিকে উচ্চস্তরে নিয়ে যাচ্ছে।

২। স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ

ব্যবসার শুরুতে বেশি পরিমান অর্থ বিনিয়োগ না করতে পারার জন্য অনেক প্রতিভাবান ব্যবসায়ীরা পিছিয়ে গিয়েছেন। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা আর্থিক বিনিয়োগ অনেক কম করেও যথেষ্ট লাভবান হচ্ছেন। কারন ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রচারকার্যে বেশ অনেকখানি অর্থ ব্যয় হয়ে যেত কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং এ অনলাইনে সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেল মার্কেটিং, ওয়েবসাইট এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন মাধ্যমে খুব স্বল্প অর্থ বিনিয়োগ করে কোম্পানি বেশ লাভবান হচ্ছে। কোম্পানির মার্কেটিং পরিচালনা করার জন্য অনেক দক্ষ ডিজিটাল মার্কেটার বেশ কম খরচে উপলব্ধ।

এই ডিজিটাল মার্কেটার গুলি ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত তুখোড় হয়, টার্গেটে কাস্টমার খুঁজে বার করা থেকে শুরু করে প্রোডাক্ট গুলির উপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে জানানো, এছাড়াও এফিলিয়েট লিঙ্ক শেয়ার করা। এই কাজ গুলির মাধ্যমে খুব অল্প খরচে সফলতার সাথে ডিজিটালই মার্কেটিং করা সম্ভব।

৩। স্বল্প পরিশ্রমে গ্রাহকের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা

সারা বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ বর্তমানে ইন্টারনেটে ব্যবহার করে থাকেন। খুব স্বাভাবিক কারনেই ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগ পটেনশিয়াল কাস্টমার অনলাইনে পাবেন। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং অর্থাৎ অনলাইন মার্কেটিং বহুল পরিমাণে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। অনলাইনে আপনার বানানো ওয়েবসাইটে অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোফাইল গুলির মাধ্যমে গ্রাহকের সাথে সুসম্পর্ক ও তৈরি হচ্ছে অতি সহজে। কারন আপনার কোন ব্যবসায়ী হিসাবে অথবা ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে প্রথম কাজ হবে, বিশ্বস্ত কাস্টমার জোগাড় করা, যেটি ধিরে ধিরে তৈরি করতে হবে। জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া যেমন- ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, লিঙ্কডইন বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট- আপ ওয়ার্ক, ফিবার, ফ্রিল্যান্সার ডট কম ইত্যাদিতে নিজের ব্র্যান্ডটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। আগ্রহী গ্রাহকদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করা ও বেশ সহজে সম্ভব। লিঙ্কডইন এমন একটি সামাজিক মাধ্যম যেখানে আপনি সহজেই কানেকশান তৈরি করতে পারেন।

৪। ডিজিটাল মার্কেটিং একটি সফলতম ক্যারিয়ার এর উদাহরণ

উচ্চ-গতির ইন্টারনেট সহজল্ভ্য হওয়ার পর থেকে রিমোট জব, ফ্রিল্যান্সিং এর অপশন বেড়ে গেছে। সেরকমই দেশের যুবক-যুবতীরা বাড়িতে বসেই অনলাইনে কাজ করতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে। কোভিডের সময় থেকেই বিভিন্ন বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক-ফর্ম-হোম অপশন শুরু করেছেন, বাড়িতে বসেই সারা বিশ্ব জুড়ে যেকোনো কোম্পানিতে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়। এই ফ্রিল্যান্সিং বা ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সবথেকে ভালো ক্যারিয়ার এর অপশন হল ডিজিটাল মার্কেটার।

সম্প্রতি সদ্য গ্র্যাজুয়েট বা যারা নিজেদের একটি সফলতম ক্যারিয়ার তৈরি করতে আগ্রহী, তারা ডিজিটাল মার্কেটিং টিকে প্রথম সারিতে রেখেছে। বর্তমান প্রজন্ম প্রত্যেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ফ্রিক, তাই ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে খুব বেশি সময় লাগে না। ভবিষ্যতেও এর চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপরে কোর্স এর ব্যবস্থা করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এছাড়াও ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল এর মাধ্যমে শেখা যায়।সাম্প্রতিককালে প্রযুক্তির বিপুল পরিমানে ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রেখে ডিজিটাল মার্কেটারদের চাহিদা সম্পর্কে সহজেই অনুমান করা যায়।

৫। স্বল্প প্রচেষ্টায় বিপুল সংখ্যক কাস্টমার সংগ্রহ করা

বৃহৎ বিপণনী সংস্থা গুলির কাছে ডিজিটাল মার্কেটিং হল এক অন্যতম হাতিয়ার। প্রত্যেক কোম্পানির প্রাথমিক কাজ হল বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো, সেটি ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই সম্ভব। ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম একটি ভাগ হল ইমেল মার্কেটিং- যার দ্বারা টার্গেটেড কাস্টমার খুঁজে বের করে মেলের মাধ্যমে কোম্পানির অফার, নতুন প্রোডাক্টের বিবরণ সহ পাঠানো হয়। পুরনো কাস্টমারদের ইমেলের মাধ্যমে নতুন অফার গুলি জানানো। অথবা ইমেলের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের লিঙ্ক শেয়ার করা, যেখান থেকে সরাসরি প্রোডাক্ট গুলি ভিউ করতে পারা যাবে। এই ভাবে যেকোনো কোম্পানির জন্য পটেনশিয়াল কাস্টমার খুঁজে পাওয়া যায়।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর আর একটি শাখা হল সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটাররা জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল গুলির মাধ্যমে কোম্পানির প্রোডাক্ট গুলির প্রমশান করে থাকে। কারন সবথেকে বেশি সংখ্যক কাস্টমার সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া যায়। ডিজিটাল মার্কেটাররা কনটেন্ট গুলিকে আকর্ষণীয় ভাবে পোস্ট করেন এবং বিভিন্ন টেম্পলেট, ইনফগ্রাফিক্স অ্যাড করে কাস্টমারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়, এছাড়াও ইনফরমেটিভ ভিডিও আপলোড করে বিপুল সংখ্যক মানুষের মন ও মস্তিষ্ককে সহজেই দখল করা যায়। ইনসটাগ্রামে শর্টশ বা রিলসের মাধ্যমে গ্রাহকদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়। পুরনো দিনের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা গুলির থেকে অনলাইনে ডিজিটালই মার্কেটিং করে অনেক সহজে এবং কম সময়ে টার্গেটেড গ্রাহক পাওয়া যায়।

৬। রিমোট জবের সুযোগ

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে রিমোট জবের চাহিদা বেড়েছে। গ্লোবাল মারকেটপ্লেস গুলিতে সারা বিশ্ব জুড়ে মানুষ কাজ করার সুযোগ বেড়েছে। ফ্রেসারশ রাও রিমোট জবে আগ্রহ প্রকাশ করছে। ডিজিটাল মার্কেটিং এমন একটি ফিল্ড, যেখানে অনলাইনে কোম্পানির প্রোডাক্ট প্রমশানের জন্য রাইটার, ডিজাইনার, ভিডিও এডিটর, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার ইত্যাদি, প্রত্যেকেই বাড়িতে বসে শুধুমাত্র ভালো ইন্টারনেটের সুবিধা থাকলেই বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও মার্কেটপ্লেসস গুলির সাথে কাজ করা যায় তাই ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমানের যুবক-যুবতীদের কাছে চাহিদাজনক হয়ে উঠেছে। আপনি বেশিরভাগ কোম্পানির ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে বাড়ি থেকেই ফ্রিল্যান্সিং বা ফুল টাইম জব করতে পারেন।

এছাড়াও কোম্পানির অনলাইন মার্কেটিং বিভাগের যেকোনো কাজ বাড়ি থেকে করা যায়। অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলোতে ডিজিটাল মার্কেটিং ইন্টার্নশিপ এবং ফুল টাইম জব খুব সহজেই পাওয়া যায়। বৃহত্তর মার্কেটপ্লেস গুলিতে রিমোট জব গুলির আধিক্য বাড়ার কারনে বেকারত্বের পরিমাণ ও কমছে। বিশেষত গৃহবধূরা এই ধরনের রিমোট জবের জন্য লাভবান হয়েছে।

৭।ক্ষুদ্র ব্যবসাটিকে বৃহৎ ব্র্যান্ডে পরিনত করা

দেশের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং শিক্ষিত বেকারের অবস্থা দেখে বোঝাই যাচ্ছে, সরকারি ও বেসরকারি চাকুরীর কি পরিমাণ বেহাল অবস্থা। সমীক্ষা অনুযায়ী, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে দেশের শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রতি আগ্রহী হয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিং এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা যে কোন ক্ষুদ্র ব্যবসা বৃহত্তর মার্কেটপ্লেস গুলিতে দাপিয়ে ব্যবসা করতে পারে।

আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসাটি বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে অনলাইন মার্কেটিং এর সহযোগিতায়। নিজের ক্ষুদ্র ব্যবসাটি শুরু করার কয়েকদিনের মধ্যেই দক্ষ একটি ডিজিটাল মার্কেটার হায়ার করে নিলে আপনার ব্যবসাটি অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। অনলাইনে লিঙ্কডইন, ইন্সটাগ্রাম, আপওয়ার্ক, ফিবার ইত্যাদি জনপ্রিয় মাধ্যম গুলির দ্বারা ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুণে আপনার ছোট ব্যবসাটি একসময়ে বৃহৎ ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোফাইল গুলি অপ্তিমাইজড করা, ইনফরমটিভ কনটেন্ট পোস্ট করা এগুলি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়।

৮। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশান(SEO)

এস সি ও টি ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি আধুনিক তম অংশ। ওয়েবসাইট গুলিকে গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম সারিতে নিয়ে আসা প্রত্যেক মার্কেটার দের লক্ষ্য। কারন গবেষণায় দেখা গেছে ৯০ ভাগের বেশি মানুষ যে কোন টপিক গুগল নামক সার্চ ইঞ্জিনে যখন সার্চ করেন প্রথম ২-৩টি ওয়েবসাইট ওপেন করে পড়ে দেখেন। তাই ওয়েবসাইট গুলিকে সার্চ ইঞ্জিনে র‍্যাঙ্ক করানো একান্ত আবশ্যিক। কারন বেশিরভাগ মানুষ যখন কোন জিনিস কেনার কথা ভাবে আগে ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখে নেয় প্রোডাক্টটি সম্পর্কে সমস্ত রকম ইনফরমেশান, রিভিউ, ইউটিউবে ভিডিও দেখে নিই।

ওয়েবসাইট গুলিকে গুগলের প্রথম সারিতে র‍্যাঙ্ক করানোর জন্য বেশ দক্ষ মার্কেটিং পরিকল্পনার দরকার। উপযুক্ত কিওয়ার্ডস, এস সি ও এর ব্যাপারে নলেজ থাকলে তবেই সম্ভব। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশান যেকোনো কোম্পানি ও ওয়েবসাইটের গ্রোথের জন্য ভীষণ জরুরি। প্রত্যেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের একটাই উদ্দেশ্য পটেনশিয়াল কাস্টমারদের কাছে পৌঁছানো তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা, কনভেন্স করানো এবং বিশ্বাস অর্জন করা।

৯।মাল্টিপেল মার্কেটিং পরিকল্পনা

ইন্টারনেট ও স্মার্ট ফোনের সহজলভ্যতার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপর নির্ভর করে সমাজের অতি সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে এলিট শ্রেনির মানুষদের একসাথেই পাওয়া যায়। প্রথমদিকে কোন একটি ব্র্যান্ডের অনলাইনে মার্কেটিং এর জন্য একটি পরিকল্পনা করা হয় কিন্তু সময়ের সাথে যদি কোম্পানির মনে হয় পরিকল্পনাটির পরিবর্তন দরকার সেটি অতি সহজেই সম্ভব।

সোশ্যাল মিডিয়ায় যেকোনো সময়ে বিজ্ঞাপনের আইডিয়া পরিবর্তন করা যায়, যেমন ধরুন আপনি ইমেলের মাধ্য্যমে নিজের প্রোডাক্টটির প্রমশান করছেন কিন্তু আপনি দেখতে পাচ্ছেন গ্রাহক যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন আপনি কনটেন্ট মার্কেটিং অ্যাপ্লাই করতে পারেন অথবা এস এম এস মার্কেটিং অ্যপ্লাই করতে পারেন। অনলাইনে খুব সহজেই গ্রাহকদের চাহিদা মত বিজ্ঞাপনের পরিকল্পনা ও পরিবর্তন করা যায়, এক্ষেত্রে কোম্পানির কোনোরকম ক্ষতিও হবে না। সবথেকে সুবিধাজনক বিষয় হল ডিজিটাল মার্কেটাররা মাল্টিপেল আইডিয়া অতি সহজেই প্রয়োগ করে কাস্টমার দের আগ্রহী করে তোলার জন্য।

১০। আয় বৃদ্ধি করে

                    যেকোনো কোম্পানির মার্কেটিং যত শক্তিশালী হবে তত তাড়াতাড়ি উন্নতির পথে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে। ইন্টারনেটের বহুল প্রচলনের সময় থেকেই ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলি অতি অল্প সময়ে অনেক বেশি আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। শুধুমাত্র অনলাইন মার্কেটিং এর ওপরে নির্ভর করে অনেক ছোট ব্র্যান্ড গ্লোবালি বিসনেস করছে। অফলাইনে মার্কেটিং এর তুলনায় অনলাইনে মার্কেটিং করে কোম্পানি গুলি দ্রুত আয় বৃদ্ধি করে। আয় বৃদ্ধি করার আরও কয়েকটি উপায় হল, অনলাইনে ওয়েবসাইট থেকে আয় করা যায়, গুগল অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে বেশ ভালো রকম অর্থ উপার্জন করা যায়।
  ইউটিউবে টিউটোরিয়াল ভিডিও বানিয়েও অর্থ উপার্জন করা যায়, কোম্পানির অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক শেয়ার করে অনেক বেশি গ্রাহক জোগাড় করা যায়। এক্ষেত্রে প্রোডাক্ট গুলির প্রমোশান এবং চ্যানেল গুলির ভিউস একত্রে বাড়তে থাকে। যে কোন ছোট ব্যবসা অনলাইনে মার্কেটিং করে এবং প্রোডাক্ট রিলেটেড ওয়েবসাইট  বানিয়ে সাথে ইউটিউবে চ্যানেল বানিয়ে খুব দ্রুত কোম্পানিটি পরিচিতি বাড়ায় সেই সাথে বিপুল পরিমান বিশ্বস্ত কাস্টমার সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়, সাধারন ভাবেই কোম্পানির আয় বৃদ্ধি ঘটে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচেয়ে ভালো দিক হল অতি দ্রুত সারা বিশ্ব জুড়ে গ্রাহকদের অন্দরমহলে পৌঁছে দিতে পারে। 

উপসংহারঃ

বর্তমানে ইন্টারনেটের সহযোগিতায় টেকনোলোজির প্রভূত উন্নতির কথা মাথায় রেখে বলাইবাহুল্য আগামিদিনে মানুষের কর্মক্ষেত্রের সর্বত্রই ডিজিটালাইজেশন ঘটবে। মানুষও প্রতিনিয়ত অনলাইন শপিং, অ্যাপস, সোশ্যাল মিডিয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং একটি সুদূরপ্রসারী এবং চাহিদাজনক মার্কেটিং পরিকল্পনা রুপে সাফল্যলাভ করছে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর হাত ধরে বিশ্ব জুড়ে গ্লোবাল মার্কেট গুলিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলিও বিনা অধিক অর্থ ব্যায়ে অতি সহজে ব্যবসাটিকে প্রসারিত করতে পারে। আশা করা যায় ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রভাবে বেকারত্ব দূর হবে ভবিষ্যতে।

Leave a Comment