বর্তমান সময়ে মহিলারাও স্বাধীন ভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, প্রধানত স্বাবলম্বী হওয়ার কথা ভাবলেই মনে পড়ে অন্যের অধিনে চাকুরী করা। কিন্তু সময়ের সাথে অর্থ উপার্জনের দিক গুলির ও পরিবর্তন ঘটেছে। পুরুষদের মতোই মহিলারাও সমান ভাবে চাকুরী ছাড়াও ছোট ব্যবসা দিয়ে নিজের অর্থ উপার্জনের পথ সুগম করতে পারে। বিশেষত গৃহবধূরা সংসার ও সন্তান সামলে বাড়ির বাইরে গিয়ে চাকুরী করা আর সম্ভব হয় না, কিন্তু মহিলা ও গৃহবধূরা সারাদিনের মধ্যে কিছুটা সময় বের করে নিতে পারলেই ঘরে বসে যেকোনো ছোট ব্যবসার মাধ্যমে সহজেই অর্থ উপার্জন করতে পারবে। এই আর্টিকেলটিতে আমরা মহিলা ও গৃহবধূদের জন্য লাভজনক কয়েকটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আলোচনা করব।
ইউটিউবে কুকিং চ্যানেলঃ
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মহিলারা রান্নায় পারদর্শী। প্রতিদিন পরিবারের মানুষজনকে নিজের রান্নার যাদুতে মুগ্ধ করে। রান্নায় পারদর্শী গৃহবধূ ও মহিলারা সহজেই ইউটিউবে একটি কুকিং চ্যানেল খুলতে পারেন। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় একটি অনলাইন মাধ্যম হল ইউটিউব। এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য প্রধান দক্ষতা হল কুকিং এ পারদর্শীতা, যেটি আগে থেকেই আছে, সাথে ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন একটি মোবাইল ফোনের দরকার পড়বে।
আপনার যদি ভালো কথা বলার ক্ষমতা থাকে সেটা প্লাস পয়েন্ট হবে আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে। ইউটিউবে চ্যানেল খোলার পরে, প্রধান কাজ হল সেটির ভালো মতো প্রচার করা। আপনাকে চেষ্টা করতে হবে প্রতিটি কুকিং ভিডিওতে নতুনত্ব রেসিপি দেখান তবেই ভিউস বাড়বে। মহিলারা বাড়িতে বসে এই ব্যবসাটি খুব সহজে, নিজের সুবিধা মত পরিচালনা করতে পারেন। অনলাইনে প্রচার ও আপনার কুকিং ভিডিওটি আকর্ষণীয় হলে অবশ্যই ব্যবসাটি সফল হবে।
নার্সারির ব্যবসাঃ
অনেক গৃহবধূরা এমন থাকেন বাড়িতে অল্প কয়েকটি ফুলের চারা বা টবে বাহারি গাছ বসিয়ে বেশ যত্ন নেন। আপনার এই শখটিকে চাইলেই ছোট ব্যবসাতে রূপান্তরিত করতে পারেন। বাড়ির পাশে যদি কোনো জায়গা না থাকে প্রথমে আপনি নিজের ব্যালকনি থেকে শুরু করতে পারেন। বাজারে চাহিদা আছে এমন ফুলের চারা কিনে তাদের পর্যাপ্ত যত্ন নিতে হবে। আপনার কালেকশানের ছবি নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে হবে, যেকোনো ব্যবসার উন্নতির ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন খুবই জরুরী। পরবর্তী সময়ে বাড়ির ছাদে শেড লাগিয়ে নিজের ব্যবসাটি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
গৃহশিক্ষকতাঃ
শিক্ষিত মহিলা ও গৃহবধূরা বাড়িতে বসে শিক্ষকতা করে সহজেই ইনকাম করতে পারেন। আপনি চাইলেই একটি কোচিং সেন্টার তৈরি করে অন্য আরও কয়েকটি টিচার নিয়োগ করে ব্যবসা টিকে বাড়াতে পারেন। অনলাইনে নিজের কোচিং এর শর্ট ভিডিও শেয়ার করে প্রচার করতে পারেন। বাড়ির আশে-পাশে ব্যানার লাগিয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেন। তবে শিক্ষকতার গুনগত মান উন্নত হওয়া খুবই দরকারি।
কাপড়ের ব্যবসাঃ
মেয়েদের বেশ পছন্দের জিনিস পোশাক, তাদের জ্ঞান ও অগাধ এই ব্যাপারে। তাই যেকোনো মহিলা নিজেকে অর্থনৈতিক দিক থেকে সক্ষম করতে চাইছে, তারা আর সময় অপচয় না করে নিজের বাড়িতেই বেশ কিছু পোশাক কিনে এনে প্রাথমিক ভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনার আশে -পাশের মানুষদের মধ্যে প্রচার করতে হবে, মেয়েদের চাহিদা মত, ইউনিক পোশাকের কালেকশান রাখতে হবে। আরও একটি উপায়ে ব্যবসাটিকে বাড়াতে পারেন ফেসবুকে লাইভে এসে নিজের কালেকশানের প্রচার করতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে ডেলিভারি বয় এর ব্যবস্থা করতে হবে।
বিউটিশিয়ানঃ
আপনি যদি সাজাতে ভালোবাসেন, আর দেরী না করে ছোট্ট একটি কোর্স করে মেক আপ আর্টিস্ট সহজেই হতে পারেন। বিশেষত মহিলারা নিজের বাড়িতে পার্লার বানিয়ে ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এটি অতি জনপ্রিয় একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, আপনার পর্যাপ্ত দক্ষতা থাকলে খুব অল্পদিনে আপনি সফল ব্যবসায়ী রুপে প্রতিষ্ঠিত হবেন। সাথে ব্রাইডাল মেকআপ শিখে নিলে আপনি সহজেই অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যেকোনো অনুষ্ঠান, বিয়েবাড়ি, পার্টি সব জায়গায় মেকাআপ এর চাহিদা খুবই বেশি।
ব্লগারঃ
আপনি যদি লিখতে ভালবাসেন এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞ্যান থাকে, আর দেরি না করে ব্লগিং শুরু করে দিতে পারেন। গৃহবধূ ও মহিলারা বাড়িতে কম্পিউটারের মাধ্যমে অনলাইনে একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে নিজের আগ্রহ অনুযায়ী টপিক চুস করে পোস্ট করতে হবে। গুগলে কিভাবে র্যাঙ্ক করানো যায়, সমসাময়িক জনপ্রিয় বিষয় নিয়ে লিখতে হবে। প্রাথমিক ভাবে কিছুটা জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে তবে ব্লগটিকে র্যাঙ্ক করাতে পারলে এবং ভালমতো প্রচার করতে পারলে অবশ্যই সফলতম ব্যবসায়ী প্রকল্প হিসাবে পরিগণিত হবে।
বুটিকঃ
ঘরে বসে ব্যবসা পরিকল্পনা গুলির মধ্যে বুটিক একটি লাভজনক ব্যবসা। মহিলারা বুটিকের মাধ্যমে নিজেদের ক্রিয়েটিভিটি কে তুলে ধরতে পারে, যেকোনো মেয়েদের শাড়ির প্রতি আলাদাই আকর্ষণ থাকে। আপনাকে ইউনিক স্টাইলের শাড়ির কালেকশান রাখতে হবে সাথে সালোয়ার ও কুর্তিও রাখতে পারেন। নিজের বুটিকের সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে। বুটিক, যেকোনো গৃহবধূ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে লাভজনক ও সফলতম একটি ব্যবসা আইডিয়া।
রুফটপ ক্যাফেঃ
আপনি সারাদিন বাড়িতে থেকে হাঁপিয়ে উঠছেন ? সংসারের যাঁতাকলে নিজেকে হারিয়ে ফেলছেন ? নিজেকে আবিষ্কার করার এবং স্বাবলম্বী হয়ে বাকি জীবন কাটানোর একটি ব্যবসা পরিকল্পনা হল রুফটপ ক্যাফে। আপনার বাড়িতে মাঝারি আকৃতির যদি কোন ছাদ থাকে ! তাহলে আর দেরী না করে শৌখিন ধাঁচের একটি ক্যাফে বানিয়ে ফেলুন।
ক্যাফের ডেকোরেশনটা নতুনত্ব হওয়া দরকার, এমন পরিবেশ হওয়া দরকার যাতে করে কাস্টমার এসে রিলাক্স ফিল করতে পারে। ব্যবসাটির শুরুর দিকে আপনি নিজেই সবটা সামলাতে পারবেন, কফি সারভ করা থেকে শুরু করে বিল পেমেন্ট করা। পরবর্তী সময়ে কাস্টমারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আপনি একটি সহকর্মী নিযুক্ত করতে পারেন। বর্তমানে মানুষ একান্ত সময় কাটানোর জন্য রুফটপ রেস্টুরেন্ট অনেকেই পছন্দ করেন, তাই ব্যবসাটির চাহিদা বাড়ছে।
ট্রেডিংঃ
আপনার শুধুমাত্র গৃহবধূ হয়ে জীবন কাটাতে ইচ্ছা করে না অথবা অন্য কারোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে আত্মসম্মানে লাগে তাহলে আপনার জন্য, ঘরে বসে বেশ লাভজনক একটি ব্যবসা আইডিয়া ভাগ করে নেবো আপনাদের সাথে। আপনার যদি টেকনিক্যাল ব্যাপারে সামান্যতম নলেজ থাকে এবং কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থাকে তাহলে আর দেরী না করে ইউটিউবে ফ্রি একটি ট্রেডিং কোর্স করে নিন সাথে বেশ কয়েকদিন ভালো করে রিসার্চ করুন, শিখুন। তারপরে ট্রেডিং করে বেশ ভালমতো ইনকাম করতে পারবেন।
হস্তশিল্প সামগ্রীঃ
আপনার যদি হাতের কাজ ভাল হয়, বাড়িতে ঘর সাজানোর বিভিন্ন জিনিস নিজেই বানিয়ে থাকেন তাহলে আর দেরী না করে, নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে প্রফেশানালি বেশি করে কাঁচামাল কিনে ইউনিক ঘর সাজানোর জিনিস অথবা পড়ামাটির পুতুল, নানান আকৃতির আসন বানিয়ে বাজারে বিক্রি ক্রুন। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজের তৈরি জিনিসের প্রচার করতে হবে এবং অবশ্যই নিজের আশে-পাশে পরিচিতি বাড়াতে হবে, মেলায়, মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে সাপ্লাই বাড়াতে হবে তবেই ব্যবসাটির উন্নতি ঘটবে।
খাবার ডেলিভারির ব্যবসাঃ
আপনি যদি কোন মেসের পাশে থাকেন অথবা অফিস, কলেজের পাশে তাহলে সহজেই ফুড ডেলিভারির ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ব্যাচেলার কর্মরত ছেলে-মেয়েরা যারা নিজের বাড়ি থেকে দূরে থাকেন তাদের প্রধান অসুবিধে হল ভালো মানের রান্না করা বাড়ির খাবার এর আকাল। তো আপনার রান্নার ব্যাপারে আগ্রহ থাকলে আর সময় নষ্ট না করে ফুড ডেলিভারির ব্যবসা শুরু করতে পারেন। রান্নার মান ও আপনার ব্যবহার ভাল হলে ব্যবসার উন্নতি ঘটবে। নিজের ব্যবসার প্রচার করুন, এবং একটি ডেলিভারি বয় নিয়োগ ক্রুন অথবা কোন কোম্পানির সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন। কারন এক্ষেত্রে রান্না করা খাবার কাস্টমারের বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে।
ফ্রিলান্সারঃ
আপনার যেকোনো রকমের দক্ষতা যদি থাকে তাহলে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন। যেমন- গ্রাফিক ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার, ব্লগার, সিঙ্গার, ডাটা এন্ট্রি, ট্রান্সলেটর, ভিডিও এডিটর, এই সবগুলিরই সারা বিশ্বজুড়ে চাহিদা রয়েছে। আর বাড়িতে বসে, সংসার ও বাচ্চার সব দায়িত্ব পালন করে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। প্রথমে আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সেগুলির স্যাম্পেল কপি সমেত একটি পোর্টফলিও বানান এবং অনলাইনে বিভিন্ন প্ল্যারটফর্ম আছে সেখানে নিজের আক্যাউনট বানিয়ে, আপনার কাজের প্রচার করতে হবে। আপনার দক্ষতা থাকলে ফ্রিল্যান্সিং করে অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারবেন, এবং সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন।
অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারঃ
আপনি মানসিক ভাবে শক্তিশালী, আপনার নিজস্ব মতামত সুন্দর করে প্রকাশ করার ক্ষমতা আছে ! তাহলে বাড়িতে বসে আপনি হয়ে যেতে পারেন অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার। প্রথমে আপনাকে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া গুলিতে অ্যাকাউনট বানাতে হবে, যেমন ইন্সটাগ্রাম, লিঙ্কড ইন, মিডিয়াম ইত্যাদি। তারপরে আপনি যে বিষয়ে বিশ্বকে জানাতে চান সেই টপিক পছন্দ করা, বেশ ক্রিয়েটিভ ভাবে আপনাকে প্রেসেনট করতে হবে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন সাইটে।
ইনফ্লুয়েন্সার হতে গেলে অনলাইনে ফলোয়ারস বাড়াতে হবে। আপনি জনপ্রিয় হলে বিপুলভাবে ইনকাম করতে পারবেন। অবশ্যই বাড়িতে বসে মহিলাদের জন্য খুব ভাল একটি ব্যবসা পরিকল্পনা।
অনলাইন পডকাস্টিং আর্টিস্টঃ
আপনার যদি ভালো বক্তা হন, নিজের জিবনের অভিজ্ঞতাকে বেশ প্রফেশানালি মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারেন তাহলে আর দেরি না করে অনলাইন পডকাস্টিং আর্টিস্ট হতে পারেন। আপনাকে একটি মাইক্রোফোন কিনতে হবে এবং স্ক্রিপ্ট টা ক্রিয়েটিভ ভাবে লিখতে হবে সাথে আপনার কণ্ঠস্বর যদি বেশ ইউনিক হয় তাহলে তো কথাই নেই, আপনি অল্প দিনে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লারটফরমে জনপ্রিয় হয়ে যাবেন। ঘরে বসে মহিলা ও গৃহবধূরা চাইলেই চেষ্টা করতে পারে। একটু ধৈর্য ধরলে আপনি ইনকাম ও করতে পারবেন এবং জনপ্রিয়তা লাভ করবেন।
বেকারিঃ
বর্তমানে বেকারি খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা বেড়েছে, প্রত্যেক অনুষ্ঠানেই কেক কেটে পালন করা হচ্ছে। মহিলারা যারা ঘরে বসে রোজগার করতে চায় তাদের জন্য উপযুক্ত। প্রথমত অল্প কয়েক দিনের বেকিং ক্লাস জয়েন করে শিখে নিতে হবে। তারপরে স্বল্প টাকা ইনভেসট করে কেক বানানোর যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। নিজের বেকারির আকর্ষণীয় একটি নাম রেখে লোকালিটিতে প্রচার করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের তৈরি কেকের ছবি আপলোড করতে পারেন, এইভাবে মানুষের মধ্যে আপনার বেকারির পরিচিতি বাড়াতে হবে। কেকের সাথে বিভিন্ন কুকিস ও বানাতে পারেন তাহলে ব্যবসাটি বৃদ্ধি পাবে। তবে বেকারির খাদ্যদ্রব্যের গুনগত মান ভালো হওয়া একান্ত দরকারি তবেই আপনি ব্যবসাটি করে সফলতা অর্জন করবেন।
জুয়েলারির ব্যবসাঃ
জুয়েলারির ব্যবসা ঘরে বসে গৃহবধূ ও মহিলাদের জন্য একেবারে উপযুক্ত। মেয়েরা জুয়েলারির ব্যাপারে আগ্রহী এবং কম-বেশি জ্ঞান ও সকলের থাকে, তাই আপনি যদি স্বাবলম্বী হতে চান নির্দ্বিধায় জুয়েলারির ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনাকে পাইকারি মার্কেটে গিয়ে জুয়েলারির কাঁচামাল কিনে আনতে হবে, পরবর্তী পদক্ষেপে আপনাকে কাস্টমারের পছন্দমতো ইউনিক জুয়েলারি বানাতে হবে, সেগুলির ফটো অনলাইন ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, এর মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিতে হবে।
টেলারিংঃ
সাধারন বাড়ির অনেক মহিলারা আছেন যারা সেলাই এর কাজ, জামার ফিটিংস করা ভালমতো জানেন, এর সাথে কিছুদিন সালোয়ার, ব্লাউজ, ফ্রক এগুলি বানানো শিখে নিলেই আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনাকে একটি সেলাই মেশিন কিনতে হবে, আর বাড়ির মধ্যেই কিছুটা জায়গা দেখে কাজ শুরু করতে পারেন। গ্রামের দিকে এই কাজটির বেশ চাহিদা রয়েছে, সাথে ব্যবসার উন্নতির জন্য রকমারি সালোয়ারের পিস, ব্লাউজের পিস ইত্যাদি ও সটকে রেখে দিতে পারেন।
আচারের ব্যবসাঃ
আপনার হাতের তৈরি আচারের সুখ্যাতি পরিবারের লোকেরা প্রায়শই করে থাকেন, তাহলে আর দেরি না করে ঘরে বসে নিজের হাতের তৈরি আচার ছোট গণ্ডীর মধ্যে বেধে না রেখে, এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। বাজার থেকে পাইকারি দরে কাঁচামাল কিনে এনে আচার বানানো শুরু করতে পারেন, মার্কেটের কয়েকটি দোকানের সাথে কথা বলে সেখানেও সাপ্লাই করতে পারেন। এছাড়াও হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করা যায়। আপনার আচারের স্বাদ ও ব্যবসায়িক বুদ্ধি থাকলে অবশ্যই অল্প দিনে আপনি প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন।
যোগা প্রশিক্ষকঃ
আপনার শরীর চর্চায় বেশ আগ্রহ আছে, তাহলে বেসিক কয়েকটি ব্যায়াম শিখে নিয়ে বাড়িতে বসেই ইনকাম করতে পারেন। কারন বর্তমানে প্রত্যেকেই সবাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠেছেন। আপনি নিজের বাড়িতে একটি যোগ ব্যায়াম সেন্টার বানাতে পারেন, প্রথম দিকে হয়তো অনেক ছাত্র-ছাত্রী পাবেন না কিন্তু সময়ের সাথে আপনার পরিচিতি তৈরি হয়ে গেলে দেখবেন বেশ লাভজনক ব্যবসায় রূপান্তরিত হবে। সারাদিন আপনাকে সময় ব্যায় করতে হবে দিনে এক ঘণ্টাই যথেষ্ট।
নেল পেনট আর্টিস্টঃ
আপনার ডিজাইনের হাত খুব ভালো, নিজের নেল গুলিকে সবসময় যত্ন করে সাজিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। তবে নিজের প্রতিভাটিকে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করুন। আপনি নেল আর্টিস্ট হিসাবে ব্যবসা শুরু করতে পারেন, কারন প্রত্যেক মেয়েরাই নিজেকে একটু স্টাইলিশ হিসাবে দেখতে পছন্দ করে। ইউনিক ডিজাইন শিখে নিয়ে কাস্টমারদের নেল আকর্ষণীয় করে তুলুন। কাজ ভালো করলে আপনার জনপ্রিয়তা বাড়বে, ব্যবসাটির ও উন্নতি ঘটবে।
প্রুফরিডারঃ
আপনি বরাবরই গ্রামাটিক্যাল বিষয়ে পারদর্শী। তবে আর দেরি না করে বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে নিজের প্রোফাইল বানিয়ে ফেলুন, এবং প্রুফরিডিং এর কয়েকটা স্যাম্পেল কপি বানিয়ে আপলোড ক্রুন। বাড়িতে বসে অনলাইনে প্রুফরিডারের কাজ করতে পারেন। অনেক রাইটিং কোম্পানি ও ওয়েবসাইট আছে যারা প্রুফরিডার নিয়োগ করেন।
এফিলিয়েট মার্কেটিংঃ
আপনি বছরের পর বছর গৃহবধূ হয়ে কাটিয়ে হাঁপিয়ে গেছেন কিন্তু আপনার ব্যবসায়িক বুদ্ধি বেশ ভাল। চিন্তা করার কোন কারণ নেই আপনি অনলাইন মাধ্যমে ঘরে বসে এফিলিয়েট মার্কেটার হিসাবে কাজ করতে পারেন। অনলাইনে কোন বড় প্রতিষ্ঠানের অধিনে এফিলিয়েট মার্কেটার হিসাবে আপনাকে রেজিস্টার করতে হবে, তারপরে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে কম্পানির প্রোডাক্ট গুলির প্রমশান করতে হবে। অনলাইনে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনাকে প্রচার করতে হবে। এইভাবে আপনি বেশ ভালোরকম অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
বিউটি ব্র্যান্ডের এজেন্টঃ
আপনার বাগ্মিতা বেশ ভাল, নিজের যুক্তির দ্বারা যে কাউকে কনভেন্স করাতে পারেন, তাহলে মার্কেটে এমন অনেক বিউটি ব্র্যান্ড আছে যারা এজেন্ট নিয়োগ করে, আপনার কাজ হবে, আপনার পরিচিত সার্কেলের মহিলাদের মধ্যে প্রোডাক্ট গুলি প্রমোশান করা, আপনি নিজের ফেসবুক ও ইনসটাগ্রামের মাধ্যমে কাজটি করতে পারেন, অর্থাৎ বাড়িতে বসেই সম্ভব। কোম্পানির তরফ থেকে কমিশন পাবেন, প্রোডাক্ট বিক্রির মধ্য দিয়ে।
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারঃ
এরকম অনেক মহিলারা আছেন, যারা অজান্তেই সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছে। তারা অনলাইনে কোর্স করে সহজেই সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হতে পারেন। বর্তমানে খুব চাহিদা আছে এই কাজের, বাড়িতে বসে কম্পিউটারের মাধ্যমে কাজটি করা সম্ভব। এমন অনেক উদাহরণ আছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ম্যানেজার হয়ে লক্ষ টাকা ইনকাম করছে।
কালচারাল সেন্টারঃ
আপনি গান, আঁকা অথবা নৃত্য যেকোন একটিতে বেশ পারদর্শী।
তাহলে নিজের প্রতিভাটিকে কাজে লাগিয়ে বাড়িতেই সেন্টার বানাতে
পারেন, লোকালিটিতে নিজের সেন্টারের প্রচার করুন। ধিরে ধিরে
আপনি লাভবান হবেন। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও প্রচার করতে
পারেন। ঘরে বসে মহিলাদের জন্য খুব লাভজনক একটি ব্যবসা আইডিয়া এটি।
উপসংহারঃ
আশা করছি, আর্টিকেলটি পড়ে বাড়িতে বসে অর্থ উপার্জন করার বেশ কয়েকটি উপায় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা গড়ে উঠেছে। যারা স্বাধীনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন, তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার পথে ছোট্ট কয়েকটি সাজেশান। তবে ব্যবসায় সাফল্য লাভ করার জন্য স্ট্রীট স্মার্ট হওয়া খুব দরকার এবং বর্তমান পরিস্থিতি বুঝে ব্যবসা পরিকল্পনা চুস করতে হবে তবেই ব্যবসায়ী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব হবে।