বাঙালিরা কয়েক দশক আগে পর্যন্ত সফলতম ব্যবসায়ী রুপে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করত। কিন্তু সাম্প্রতিককালে শিক্ষিত বাঙালিরা শুধুমাত্র সরকারি ও নামীদামী উচ্চপদস্ত চাকুরীজিবি হয়েই শান্তিতে মিডিল ক্লাস মান বজায় রেখে জীবন কাটাতে চায়।
তবে বর্তমান প্রজন্ম ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে স্বল্প পুঁজিতে বিভিন্ন রকম ব্যবসায়ী পরিকল্পনার সম্মুখীন হচ্ছে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে মাত্র পঁচিশ হাজার টাকায় সহজলভ্য এবং কোনোরকম বিশেষ দক্ষতা ছাড়াই ২৫টি ব্যবসা পরিকল্পনার সম্পর্কে আমরা আলোচনা করবো…।
২৫টি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা গুলি হল
১। টেলারিংঃ
আপনি যদি বিভিন্ন রকমের মহিলা ও পুরুষদের পোশাক তৈরিতে পারদর্শী হন তাহলে অতি সহজে একটি টেলারিং এর ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ব্যবসার প্রথমদিকে বাড়িতেই একটি সেলাই মেশিন কিনে ফেলুন তারপরে নতুনত্ব ডিজাইনের পোশাক তৈরি করে সেগুলোর সঠিকভাবে বিজ্ঞাপন করুন। বর্তমানে প্রত্যেকেই নিজেকে আকর্ষণীয় পোশাকে সাজাতে ভালোবাসে, তাই খুব অল্প সময়ে এবং স্বল্প পরিশ্রমে টেলারিং এর ব্যবসা শুরু করতে পারেন এবং অনেক অর্থও উপার্জন করতে পারেন।
২। ব্লগারঃ
যারা লিখতে ভালবাসেন, আর দেরি না করে নিজেদের লেখনীর প্রতিভাকে প্রফেশানালি ব্যবহার করুন। প্রথমে অনলাইন ওয়েবসাইটে একটি প্রোফাইল বানান এবং নিজের পছন্দমত টপিকের ওপর ব্লগ পোস্ট করুন। ব্লগটিকে জনপ্রিয় আর্টিকেলে সমৃদ্ধ করতে হবে, যাতে করে টার্গেট অডিয়েন্সের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আরও একটি উপায় আছে, আপনি লেখক না হলেও ব্লগ বানিয়ে গেস্ট রাইতার বা কন্টেন্ট রাইটার নিযুক্ত করতে পারেন। এভাবেও আপনার ব্লগিং বিসনেস টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
৩। হোম ডেলিভারিঃ
আপনার বাড়ি শহরাঞ্চলে বা কোন বড় কোম্পানির নিকটে হলে সহজেই হোম ডেলিভারির ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় জীবিকার তাগিদে বাড়ি থেকে দূরে বসবাস করতে হয় এবং সারাদিন অফিসের কাজের চাপে কাটিয়ে তারপরে বাড়ি ফিরে সুস্বাদু খাবারের অভাব অনুভব করে। আপনি যদি রান্নায় পারদর্শী হন এবং টাকার অভাবে ব্যবসা শুরু করতে পিছপা হচ্ছেন তাহলে বলি মাত্র পঁচিশ হাজার টাকায় হোম ডেলিভারির ব্যবসা শুরু করতেই পারবেন।
প্রথমে অল্প কয়েকটি রান্নার পদ নিয়ে শুরু করতে হবে তারপরে খদ্দেরের চাহিদামত রান্নার পদ বাড়াবেন। অবশিষ্ট খাবার সংরক্ষণ করার জন্য একটি ফ্রিজ কিনতে লাগবে। আপনার খাবারের গুনগত মান এবং ব্যবহার ভালো হলে আপনি অল্পদিনেই ভালো জায়গায় পৌঁছে যাবেন।
৪। টোটো পরিবহনের জনপ্রিয় ব্যবসাঃ
আপনি দীর্ঘদিন বেকারত্বের সাথে লড়াই করছেন, তাহলে আপনাকে একটি ভালো ব্যবসায়িক পরিকল্পনার সাথে পরিচয় করাই। আপনি যদি গাড়ি চালানোয় পারদর্শী হন তাহলে একবার লন নিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে একটি টোটো কিনে নিন, এটি বর্তমানে পরিবহণের একটি অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
প্রথমে নিকটতম পরিবহন সংস্থার মাধমে রাস্তার পারমিটের লাইসেন্সটা বানিয়ে নিন তারপরে মানুষের পরিষেবা দিতে এবং জীবিকা হিসেবে বেছে নিন। আপনি চাইলে টোটো ভাড়া দিতে পারেন। সাম্প্রতিক সময়ে টোটো যানবাহনটি পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
৫। শাড়ির ব্যবসাঃ
বিবাহিত মহিলা ও গৃহবধূ দের জন্য সবচেয়ে সহজ ব্যবসার উপায় হল শাড়ি, সালোয়ার অর্থাৎ জামাকাপড়ের ব্যবসা। আপনাকে শুধু ব্যবসার শুরুতে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে। অনলাইন ওয়েবসাইট বানিয়ে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোফাইল বানিয়ে আপনাকে বিজ্ঞাপন দিতে হবে, আপনার ইউনিক কালেকশানের প্রচার চালাতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া হল প্রচারের জনপ্রিয় মাধ্যম।
আপনি বাড়িতে বসেই ব্যবসাটি সাফল্যের সাথে করতে পারেন, তবে আপনাকে কাস্টমারের পছন্দমতো পোশাক স্টকে রাখতে হবে এবং ডেলিভারি অ্যাপ এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। মহিলারা কোনরকম দক্ষতা এবং স্বল্প পুঁজিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
৬। পারফিউম তৈরির ব্যবসাঃ
আপনি উচ্চ শিক্ষিত কিন্তু বর্তমানের চাকুরীর খরাতে বেকারত্ব জীবন কাটাচ্ছেন তবে আপনার জন্য এই পরিকল্পনাটি উপযুক্ত। প্রথমে একটু পড়াশোনা এবং কয়েকটি মেশিন ও ছোট্ট একটি ল্যাব এর দরকার পড়বে। বেশ কম দামে আপনার তৈরি পারফিউমের সম্ভার লোকালিটিতে বিক্রি করতে পারবেন। তবে পারফিউম টির গুনগত মান ভালো হওয়া দরকার।
যেকোনো ব্যবসার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল আপনার প্রোডাক্ট গুলির প্রচার করা। টার্গেট কাস্তমারের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। অনেকসময় দেখা যায় শহরতলী ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ নামী বড় কোম্পানির প্রোডাক্ট অতিরিক্ত দামের জন্য কিনতে পারে না। সেই সব এলাকাতে আপনার তৈরি পারফিউমের চাহিদা বেশি হবে। আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার চালাতে হবে, বেশি সংখ্যক জনগণের মধ্যে আপনার প্রোডাক্টটিকে পৌঁছে দিতে হবে।
৭। জনবহুল এলাকায় কফির দোকানঃ
জনবহুল এলাকা অর্থাৎ কোন বড় ইন্ডাস্ট্রির সামনে অথবা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সামনে আপনি একটি কফির দোকান খুলে বসতে পারেন। এখন ধোঁয়া ওঠা চা এর মত কফির চাহিদা বেড়েছে বিশেষত শহরাঞ্চলে।
প্রথমে একটি কফি মেশিন এবং অস্থায়ি জায়গা দেখে ব্যবসাটি শুরু করতে হবে। বিশেষত শেষ বেলার দিকে অফিস ফেরত এমপ্লয়িদের সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার মোক্ষম উপায় হিসাবে কফির চাহিদা থাকবে। সাথে স্ন্যাক্স জাতীয় খাবারও ছোট্ট দোকানটিতে রাখতে পারেন। কফির স্বাদের সাথে খাবারের গুনগত মান ভালো হলে আপনার ব্যবসার উন্নতি ঘটবে।
৮। ই- কমার্স এজেন্সিঃ
ই-কমার্স অর্থাৎ অনলাইন মাধ্যমে ব্যবসা করা। এখন ইন্টারনেট এর যুগে বাড়িতে বসে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বিসনেস করা যায়। আপনার যদি ইন্টারনেট সম্পর্কে অল্প বিস্তর দক্ষতা থাকে, তাহলে অনলাইন বিসনেস শুরু করতেই পারেন। প্রথমে ভালো ইন্টারনেট কানেকশান ও ল্যাপটপ বা কম্পিউটার লাগবে।
আপনি অনলাইনে শপিং অ্যাপের লিঙ্কের প্রমশানের মাধ্যমে বিসনেস করতে পারেন। অনলাইন টিকিট কাটা, এফিলিয়েটেড লিঙ্কের প্রমোশান, বিভিন্ন অনলাইন ওয়েবসাইট এর প্রচার এর মাধ্যমে ব্যবসাটি চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। আপনার এজেন্সিতে আরও কয়েকজন সদস্য নিযুক্ত করতে পারেন। একটু দক্ষতা এবং মার্কেটিংটা ভালো করে বুঝলেই সফল হবেন।
৯। নার্সারির বিসনেসঃ
আপনার বাড়ির পাশে যদি ফাঁকা জায়গা থাকে তাহলে সহজেই মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী বাগান বানিয়ে ফুলের গাছ অথবা এরিকা গাছ বসাতেই পারেন। আপনাকে প্রথমে অল্প টাকা বিনিয়োগ করতে হবে, গাছ গুলি কিনে সঠিক জায়গায় বসিয়ে সময় নিয়ে যত্ন করতে হবে। আর নিজের লোকালিটিতে প্রচার করতে হবে, এছাড়াও ফেসবুক,ইন্সতাগ্রামে প্রোফাইল বানিয়ে আপনার বাগানের গাছগুলোর ছবি আপলোড করতে পারেন। আপনাকে বেশ পরিশ্রমী হতে হবে এইধরনের ব্যবসায় সাফল্য লাভ করার জন্য।
১০। ফ্রিলান্সারঃ
সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিসনেস আইডিয়া হল ফ্রিল্যান্সিং। আপনি অনলাইনে যেকোনো ব্যাপারে দক্ষ হন না কেন, আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। প্রথমত একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার আর সাথে হাই-স্পিডের ইন্টারনেট কানেকশান , তারপরে আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় মাধ্যম গুলিতে নিজের কাজ গুলিকে আপলোড করতে হবে। সারা ভারত তথা সারা বিশ্বের নানান ক্লায়েন্টের সাথে আপনি কাজ করতে পারেন। আপনি যদি নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে বেশ দক্ষ হন তাহলে সহজেই ফ্রিল্যান্সিং করে সফলতম ব্যবসায়ী রুপে পরিগণিত হবেন।
১১। ঘরোয়া সব্জির চাষঃ
আপনার বসতবাড়ি সংলগ্ন ছোট্ট জায়গা থাকলে নিজের জীবিকা নিয়ে চিন্তা করবেন না ! এখন মার্কেটে গেলেই অসময়ের নানারকম রাসায়নিক সার দেওয়া সব্জি পাওয়া যায়। আপনি ঘরোয়া পদ্ধতিতে জৈব সার প্রয়োগ করে সব্জির চাষ করতে পারেন। স্থানীয় চাহিদা মত সব্জির জোগান দিতে হবে। আপনাকে ব্যবসার শুরুতে অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে, তারপরে আপনার পন্যের গুনগতমান ভালো হলে এবং সঠিক ভাবে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে আপনি অল্পদিনেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন।
১২। ডেলিভারি বয়ঃ
আপনি দীর্ঘদিন ধরে বেকারত্বের সমস্যায় জর্জরিত, তাহলে আর দেরী না করে, ই এম আই তে একটি বাইক কিনে ফেলুন এবং গাড়ি চালানোয় পটু হতে হবে। অনলাইনে নিজের প্রোফাইল বানিয়ে ফেলুন নিজের সম্পর্কে তথ্য আপলোড করুন আর আপনার জীবিকা লিখেদিন। এরপরে বিভিন্ন অনলাইন শপিং অ্যাপ গুলির স্থানীয় স্টোর গুলির সাথে যোগাযোগ করে ডেলিভারি বয় এর কাজ করতে পারেন। আপনার কাস্টমার রেটিং ভাল থাকলে আপনার পদোন্নতিও ঘটবে।
১৩। হস্তশিল্প সামগ্রীঃ
আপনি বহুদিন পরনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে আছেন, গৃহবন্দী থেকে আপনাকে কিছু করতে হবে। আপনার জন্য এই পরিকল্পনাটি উপযুক্ত, আপনার হাতের কাজ যদি খুব ভালো হয়, অবসর সময়ে আপনি বিভিন্নরকম ঘর সাজানোর জিনিস বানিয়ে থাকেন তাহলে একটু বেশি সময় দিয়ে বিসনেস করুন। প্রথমে কাঁচামাল কিনতে কিছু টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। তারপরে আপনাকে নিজের তৈরি জিনিসকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে, যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন খুব জরুরী। তরপরে বুঝতে হবে কাস্তমারের চাহিদা, পছন্দ। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আপনার তৈরি জিনিস ইউনিক কিনা।
১৪। মোমোর দোকানঃ
পাহাড়ের তথা সমভূমিতেও মোমো নামক খাদ্যদ্রব্যটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আপনার যদি খাবার তৈরিতে কমবেশি আগ্রহ থাকে তাহলে ঘনজনবসতি বিশিষ্ট লোকালয়ের মধ্যে অল্প জায়গা ভাড়া নিয়ে মোমর দোকান বানিয়ে ফেলুন। এই ব্যবসার মূলমন্ত্র খাবারটি সুস্বাদু ও উপাদেয় বানাতে হবে এবং কাস্টমারের সাথে ভালো ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। এই ধরনের ব্যবসা খুবই লাভজনক হয়ে আজকাল। আপনাকে সঠিক জায়গায় দোকানটি বানাতে হবে এবং খাবারের গুনগতমান খুব ভালো রাখতে হবে। যেকোনো বিসনেসে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে পরিশ্রম ও বুদ্ধির অতীব প্রয়োজন।
১৫। ধুপকাঠির ব্যবসাঃ
আপনি যদি বদ্ধপরিকর হন যেকোনো উপায়ে আপনাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে কিন্তু আপনার কাছে পুঁজিও কম। তাহলে এই পরিকল্পনাটি আপনার জন্যে উপযুক্ত। আপনি সুগন্ধি ছড়িয়ে মানুষের জীবনকে সুন্দর বানাতে পারেন। আপনি ধুপকাঠির ব্যবসা নির্দ্বিধায় শুরু করতে পারেন।
প্রথমত, আপনি একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে বিক্রি করতে হবে। ব্যবসাটির শুরুতে খুবই যৎসামান্য টাকা বিনিয়োগ করতে হবে পন্যসামগ্রী স্টকে রাখার জন্য। নিজস্ব লোকালিটিতে পায়ে হেঁটে বা সাইকেলের মাধ্যমে ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। আপনার এই ব্যবসাটিতে ধুপকাঠি পচে যাওয়া বা খারাপ হয়ে যাওয়ার কোন সম্ভবনা থাকবে না। তাই সহজেই বিশেষ কোন দক্ষতা ছাড়াই ধুপকাঠির ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
১৬। ব্যাঙ্কের নিকটবর্তী কোন স্থানে সি এস পি এর স্বীকৃতি লাভ করে কম্পিউটার সহ বসুনঃ
বর্তমানে প্রায় প্রতিমাসেই সরকারের তরফ থেকে বিভিন্নরকম প্রকল্প,লোণ ও লিংক করাতে সাধারন মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়। ব্যাঙ্কের তরফ থেকে সেরকম কোন সাহায্যও পাওয়া যায়না।
আপনি যদি কিছুটা শিক্ষিত হন এবং কম্পিউটার সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞ্যান থাকে তাহলে নিকটবর্তী ব্যাংকে সি এস পি এর জন্য আবেদন করুন, যদি সি এস পি লাভ করেন তাহলে আর দেরি না করে ব্যাঙ্কের পাশেই একটি ছোট জায়গা ভাড়া নিয়ে, একটি কম্পিউটার নিয়ে বসে পড়ুন। ব্যাঙ্কের সামনে এরকম অনেক মানুষ পাবেন যারা ফর্ম ফিলাপ থেকে শুরু করে সরকারি স্কিম গুলো সম্পর্কে অজ্ঞ। আপনাকে সরকারি প্রকল্পগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। অনেক নিরক্ষর মানুষদের সাহায্যও করতে পারবেন এবং আপনার পর্যাপ্ত ইনকাম ও হবে।
১৭। পোলট্রি ফার্মঃ
আপনি যদি পরিশ্রমী হন এবং আপনার বসতবাড়ি সংলগ্ন কোথাও ফাঁকা জায়গা থাকে তাহলে খুব সহজেই পোলট্রি ফার্ম খুলতে পারেন। এই ব্যবসাটির শুরুতে বেশকিছু টাকা বিনিয়োগ করতে হবে, আপনি চাইলে লোণ নিতে পারেন কারন এটি খুবই লাভজনক ব্যবসা। আপনাকে মার্কেটের চাহিদামত বিভিন্ন ব্রিডের মুরগির চাষ করতে হবে। তাদের খুব যত্ন করতে হবে, সঠিক সময়ে খাবার দিতে হবে। ব্যবসার উন্নতি হলে দেখভালের জন্য আপনি লোক রাখতে পারেন। আপনি যদি ব্যবসায়ী মানসিকতা সম্পন্ন হন, পরিশ্রমী হন তাহলে এই ব্যবসাটি আপনার জন্য উপযুক্ত।
১৮। এডুকেশানাল ওয়েবসাইটঃ
আপনি বরাবর বাড়িতে বসে টিউশান পড়ান এবং কয়েকটি বিষয়ে বেশ পারদর্শী। বছরের পর বছরের ধরে আপনার তৈরি করা নোটস পড়ে ছাত্ররা ভালো রেজাল্ট করছে তাহলে শুধুমাত্র টিউশান পড়ানর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন না। এরকম বহু টিচার আছেন যাদের পড়ানোর দক্ষতার জন্য অনেক শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয়েছেন। তাদের জন্য এই ব্যবসা পরিকল্পনাটি যতউপযুক্ত।
আপনি অনলাইনে একটি এডুকেশানাল ওয়েবসাইট খুলে ফেলুন, এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার তৈরি করা নোটশ এর সেল করুন। সাথে অনলাইনে বিভিন্ন ক্লাসের স্টুডেন্টদের পড়াতেও পারেন। ইউটিউবে চ্যানেল বানিয়ে অনলাইন ক্লাস নেওয়া বর্তমানে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে আপনাকে খুব বেশি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে না, একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার সাথে দামি ক্যামেরা যুক্ত মোবাইল ফোন। আপনার সার্ভিসের কোয়ালিটি উন্নত মানের হলে এবং মার্কেটিং ভালোভাবে করলে অতি অল্পদিনে সাফল্য লাভ করবেন।
১৯। যোগব্যায়ামের সেন্টারঃ
বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠেছেন, প্রতিদিন যোগ অভ্যাস করারও প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আপনি যদি যোগার শিক্ষক হয়ে থাকেন, তাহলে আর দেরী না করে বাড়ির কাছাকাছি কোন জায়গা দেখে সেন্টার বানিয়ে ফেলতেই পারেন, তবে জায়গা নির্বাচনটি সঠিক হওয়া দরকার তবেই বেশী সংখ্যক ছাত্র পাওয়া যাবে।
প্রথমত আপনাকে একটি জায়গা ভাড়া নিতে হবে, তারপরে অনলাইনে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রোফাইল বানিয়ে নিজের সেন্টারের প্রচার করতে হবে। করোনার সময়কাল থেকেই অনলাইনে যোগব্যায়াম এর ক্লাস ও করানো যায়। শিক্ষিত বেকারদের জন্য খুব ভালো একটি ব্যবসার উপায় এটি। সময়ের সাথে আপনি লাভবানও হবেন।
২০। গৃহপরিচারিকা সাপ্লাই সার্ভিসঃ
বর্তমানে পুরুষ ও মহিলা উভয়েই কর্মজীবী হওয়ায় গৃহপরিচারিকার চাহিদা বেড়েছে। বাড়ির কাজ থেকে শুরু করে, বাচ্চাদের দেখাশোনা, বয়স্কদের পরিচর্যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিচারিকার প্রয়োজন পড়ে। আপনি চাইলে গৃহপরিচারিকা সাপ্লাইয়ের সেন্টার তৈরি করতে পারেন। আপনার কাজ হবে যে সমস্ত মহিলারা এই ধরনের কাজে দক্ষ তাদের সাথে যোগাযোগ করা এবং যে সমস্ত পরিবারের গৃহপরিচারিকার দরকার পড়ে তাদের বাড়িতে সাপ্লাই করা।
প্রথমত আপানাকে সেন্টারের একটি নামকরণ করতে হবে, তারপরে ফোন নাম্বার সহ ও সাথে আপনার সেন্টারের তরফ থেকে কি কি সার্ভিস সাপ্লাই করা হয়, সেগুলি সমেত আপনাকে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। নিজের লোকালিটিতে এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার করতে হবে। আপনি কাস্তমারের সাথে যোগাযোগ করবেন এবং পেমেন্ট নেবেন সেখান থেকে কমিশন রেখে আপনার সেন্টারের মেয়েদের দেবেন। খুবই প্রাসঙ্গিক একটি ব্যবসা বিচক্ষণতার সাথে পরিচালনা করলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সাফল্য লাভ করবেন।
২১। ট্যুর গাইডঃ
বাঙালি মানেই বছরে অন্তত দুবার করে বেড়াতে যাওয়া আবশ্যিক। আপনি চাহিদাজনক একটি ব্যবসার পরিকল্পনা খুঁজছেন ? তাহলে এই পরিকল্পনাটি আপনার জন্যই। আপনি ট্যুর গাইড হিসাবে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনার কাজটি হল টিকিট বুকিং, রুট প্ল্যানিং করা, নির্দিষ্ট জায়গার বেস্ট বেস্ট সাইট সিন গুলির লিস্ট করা, হোটেল বুকিং করা, এছাড়াও হোটেল গুলির সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
ব্যবসার শুরুতে খুব বেশি টাকার বিনিয়োগ করার দরকার পড়বেনা শুধুমাত্র অনলাইনে একটি ওয়েবসাইটে একটি প্রোফাইল বানাতে হবে ও সাথে আপনার বিসনেসটির উন্নতমানের প্রচার চালাতে হবে। প্রথমদিকের কাস্তমারদের রিভিউ পোস্ট করতে হবে। আপনি সঠিকভাবে এই ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারলে খুব অল্প সময়ে লাভজনক ব্যবসা রুপে পরিগণিত হবে।
২২। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টঃ
আপনার যদি সবাইকে নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা খুব ভালো থাকে, সাথে আরও একটি গুন থাকা আবশ্যিক ভালো কথা বলার ক্ষমতা তাহলে বেকারত্বের তকমা মুছে অথবা অন্যের অধীনে চাকুরী করে আর সময় নষ্ট করবেন না। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট অর্থাৎ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা করা। অনুষ্ঠানের সময়সূচি থেকে শুরু করে, জায়গা, কি কি খাবারের মেনু থাকবে, এছাড়াও জায়গাটির ডেকোরেশনের দায়িত্ব সব কিছু আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে।
আপনি যদি ক্রিয়েটিভ মাইন্ডের হন তাহলে বেস্ট হয় সাথে প্রতিবারের অনুষ্ঠানে আপনাকে ইউনিক কিছু করতে হবে, এইভাবে মানুষের চোখে আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াতে হবে তবেই অতি প্রতিযোগিতার বাজারে আপনি নিজের ব্যবসায়ে উন্নতি করতে পারবেন। আপনি একা সবদিক সামলাতে পারবেন না,আপনার সহকারি নিয়োগ অত্যন্ত জরুরি।
২৩। অনুবাদকঃ
আপনার যদি কোন বিদেশি ভাষা রপ্ত করা থাকে প্রফেশানাল লেভেলে তাহলে সহজেই অনুবাদক রপে ফ্রিল্যান্সিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনাকে চোখে পড়ার মত প্রোফাইল বানাতে হবে, সাথে নিজের দক্ষতার ডেমো দিয়ে পোস্ট করতে হবে। বর্তমানে অনলাইনে ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া গুলিতে প্রচার করা একান্ত জরুরী। এই ব্যবসাটির শুরুতে তেমন বিশাল কিছু বিনিয়োগের দরকার পড়বে না তবে আপনাকে নিজের কাজ সম্পর্কে ডেডিকেটেড থাকতে হবে এবং ভাষার ব্যাপারে দক্ষ হওয়াও জরুরি।
২৪। পুরানো বই সাপ্লাই এর ব্যবসাঃ
আপনি যদি বই পোকা হন অথবা বিভিন্ন জোনারের বই এর ব্যাপারে বেশ জ্ঞ্যান আছে তাহলে আর দেরি না করে পুরানো বই সাপ্লাই এর ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
প্রথমত আপনাকে কলেজ স্ট্রীট এর প্রত্যেক কোণা সম্পর্কে পরিচিত হতে হবে। অনলাইনে নিজের একটি প্রোফাইল বানিয়ে বই প্রেমী মানুষগুলোর চাহিদা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, তারপরে দুস্পাপ্য বইগুলি কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে বইগুলি স্টকে রাখতে হবে। আরও একটি অপশান আছে প্রথমে অর্ডার নিয়ে তারপরে বইগুলি জোগাড় করতে পারেন। বাড়িতে বসে না থেকে এই ব্যবসাটি শুরু করতেই পারেন। এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাও বেশ কম। তবে আপনাকে কাস্তমারের চাহিদা পূরণ করতে হবে সঠিক সময়ে।
২৫। ফাস্ট ফুডের দোকানঃ
আপনি ফাস্ট ফুড তৈরিতে বেশ পটু কিন্তু আপনার কাছে ব্যবসা শুরু করার মত মুল্ধন নেই। তাহলে এই পরিকল্পনাটির কথা একবার ভেবে দেখতে পারেন।
প্রথমত আপনি বিভিন্ন মেলায় অস্থায়ি দোকান দিতে পারেন আপনাকে শুধু খাবার বানানোর কাঁচামাল গুলো কিনতে হবে মেলার করতিপখকে কিছু টাকা দিতে হয়, সেটা খুব বেশি অ্যামাউন্তের হয় না। আপনাকে খাবার স্বাদ ও কোয়ালিটিতে কার্পণ্য করলে চলবে না। এছাড়াও আপনার সেন্টারের প্রচার অত্যন্ত জরুরি। কোন ইউনিক খাবারের আইটেমও যোগ করতে পারেন। বর্তমানে নিত্যনতুন ফাস্ট ফুডের অপশান বেড়েই চলেছে, তাই এই ব্যবসাটির চাহিদাও বেড়েছে।
উপসংহারঃ
সাম্প্রতিককালে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় চাকুরীরত অবস্থায় নিজের জীবনকাল কাটিয়ে দেওয়ার থেকে নিজের দক্ষতা অনুযায়ী যেকোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করা অনেক বেশি লাভজনক। যারা এখনও সঠিক ভাবে নির্ধারণ করতে পারেননি কোন দিকে এগোলে লাভবান হবেন তাদের জন্য আশা করছি এই আর্টিকেলটি কিছুটা হলেও কাজে আসবে। আপনারা নিজেদের সুবিধামত যেকোন ব্যবসা পরিকল্পনা শুরু করতেই পারেন। তারপরে নিজের পরিশ্রম ও দক্ষতা অনুযায়ী পরিচালনা করলে অবশ্যই সফল হবেন।